সেই ছেলেটি

কষ্ট (জুন ২০১১)

মোহাম্মদ নাজিরুল ইসলাম
  • ১৯
  • 0
  • ১৩
ছেলেটির নাম জানি না। হাবাগোবা কথায় তোতলামো ভাব আছে কিছুটা। পড়ে পঞ্চম শ্রেণীতে কোন এক রেজিঃ প্রথামিক বিদ্যালয়ে। রোল হিসেবে ছাত্র ভালই মনে হল। বৃত্তি দিবে বলে তার আবদার। গরীব ঘরের সন্তানই হবে বটে। চেহারায় সেটাই স্পষ্ট। দেখে মায়া হওয়ার মতই। আমরা দোকানে অনেকেই ছিলাম, কাজ করাতে এসেছি। দোকানদার আমার পরিচিত, হিন্দু মানুষ, দাদা বলেই ডাকি। তাঁকে আমার কাজটা বুঝিয়ে দিয়ে চেয়ারে বসে রইলাম। এমন সময় হাবাগোবা ছেলেটি আসল। এসেছে সাজেশন নিতে। বৃত্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে প্রাইমারী শিক্ষকগণ একত্রিত হয়ে বের করেছেন। যার দ্বারা শিক্ষকগণ ছাত্রদেরকে পাঠ্য বিষয় সমূহের বৃত্তি পরীক্ষায় আশু সম্ভাব্য প্রশ্ন সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে পারেন। সেই সাজেশনটি নিবে এই ছেলেটি। ভিতরে দাদা এবং তার সহকর্মী কাজ করছে। ছেলেটি দাঁড়িয়ে ড্যাবা ড্যাবা চাহনি দিয়ে দেখছে। ওর চোখে মুখে আত্মতৃপ্তির ছাপ। দরকারি জিনিস বহু খোজাখোজির পর সেই জিনিসটি হাতে পাওয়ার আগ মুহূর্তে সন্ধান লাভ করে মানুষের চোখে মুখে যে আত্মতৃপ্তির ছাপ দেখা যায়। সেই আত্মতৃপ্তির ছাপ আমি এই ছেলেটির চোখে মুখে দেখলাম। ছেলেটির হয়তবা কম কথা বলার অভ্যাস। চঞ্চলতা বলতে যে একটি জিনিস মানুষের মাঝে থাকে সেই জিনিসটি তার মাঝে সম্পুন্ন অনুপস্থিত। একটা স্থিরভাবে, যে রকম সাধারণত সাংসারিক ও কর্মঠ মানুষের মাঝে দেখা যায়। সেটা আমি এই কোমল মতি শিশুটির মাঝে লক্ষ্য করলাম। তার চেহারায় দারিদ্রের স্পষ্ট ছাপ। যা তাকে সমাজে দারিদ্র হিসেবে সমুজ্জ্বল করে আর দশটা ছেলে মেয়ে থেকে আলাদা করেছে।
অবশেষে ছেলেটি সাজেশন নিতে পারল না। অবাক কথা তাই না। অবাক হবার মতই বটে। আমি দেখেছি সেদিন সে ছেলেটির আত্মতৃপ্ত মনের কি ভয়ংকর ব্যথা। কি নিদারুণ মনকষ্ট নিয়ে ফটোস্ট্যাট দোকান থেকে বের হয়ে গেছে। যে মনঃকষ্টের জ্বলা যন্ত্রণায় আত্মতৃপ্তির চোখ দিয়ে ঝড়তে শুরু করেছিল- লোনা জল। আর তার মাথাটা! আমি দেখলাম সেই যে নিচু হল যেন অপমানের জ্বালায় পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ড্রেনের প্রবাহিত দুষিত কাল পানির সাথে মিশে যেতে চাচ্ছে। হ্যাঁ মিশে যাওয়ারইত কথা, তার কাছে একটি টাকা নেই। মাত্র একটি টাকা! এত অপমানেরই কথা। ঐ ভদ্রলোক দোকানদারের সহকারী কত সহজ ভাবে বলে ফেলল না ১৩ টাকার কম হবে না। ছেলেটির কত সুন্দর সহজ আর সাবলীল ভাষায় ছোট্ট একটি আবদার ভাইজান ১২ টাকায় দেয়া যায় না। ঐ সহকারী ছেলেটি কর্কশ আর রাবিশ ভাষায় না শুধু ভয়ংকর চোখ রাঙ্গানো সহকারে কোমল মনা ঐ ড্যাবা ড্যাবা চোখের ছেলেটিকে বলে দিল কম নাই।
ছেলেটির মনে হয় পৃথিবীর আর কোন ভাষা মনে আসল না যার কারণে মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলে নিজের ভাগ্যকে ধিক্কার দিতে দিতে দোকান থেকে বেরিয়ে গেল। আমি ডেকেছিলাম পিছন থেকে। কিন্তু ফিরে তাকায়নি। তারপর ঐ দাদাকে আমি ভীষণ তিরস্কার করে দোকান থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। আর কোন দিন তার দোকানে কাজ করাই নি।
আমার এই স্বাধীন বাংলার বুকে আজও এমন হত দারিদ্র লোক আছেন যারা তাঁদের সন্তানদেরকে প্রাথমিক শিক্ষা দিতে গিয়েও হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে যান। এদের কি হবে। এরাওত স্বাধীন বাংলা মায়ের সন্তান। এরাওত বাঙ্গালী, বাংলা ভাষায় কথা বলে। এরাও মানুষ। এদের আছে শিক্ষা গ্রহণের অধিকার, ইচ্ছা। আছে ভাল মানুষ হওয়ার স্পৃহা, না হতে পারার যন্ত্রণা। এদের প্রতি কি আমরা সমাজের বড় বড় মাথাওয়ালাদের করার কিছু নেই।
কয়েকদিন পর আমি রিকশায় করে কোথায় জানি যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি সেই ছেলেটি। হেঁটে যাচ্ছে, ছন্যছাড়া হাঁটা। দুপুরের কড়া রোদে পাকা রাস্তায় খালি পায়ে কাঁধে বস্তা নিয়ে হাঁটছে। ভাল করে চেয়ে দেখলাম-হ্যাঁ সেদিনকার ঐ দোকানের ছেলেটিই। রিকশাওয়ালাকে দাঁড়াতে বললাম- ছেলেটির সাথে কথা বলা দরকার। ছেলেটি কি দারিদ্রের কষাঘাত আর মনঃকষ্টে লেখা পড়া বাদ দিয়ে দিল। নাকি ...। কিন্তু রিকশা থেকে নেমে যানজট পেরিয়ে রাস্তার অপর পাশে গিয়ে ছেলেটিকে আর খুঁজে পেলাম না। তার ঐ কাঁধের বস্তা নিয়ে কোথায় জানি হারিয়ে গেছে।
ছেলেটি এখন মাঝে মাঝে রাত্রে ঘুমের ঘোরে আসে। আমাকে বলে, সাহেব লেখাপড়া অনেক বড় জিনিস, ওটা আমাদের মত ছোট মাথাওয়ালাদের জন্য না। ওটা আপনাদের জন্য। আমাদেরকে মানায় না। আমাদের শোভা পায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছেড়া কাগজ কুড়ানো। যাই চারটা কাগজ কুড়াই- বিকেল বেলা খাওয়ার চাইলে ডাইল নিতে অইব নতুবা কপালে উপোষ। হি....হি.......হি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়সাল আহমেদ bipul ****গল্পটি পরা হয়নি আগে .
ফয়সাল আহমেদ bipul গল্পটি পরা হয়নি l ভালো লাগলো l ভাইয়া তোমার জন্ম তারিখটা ঠিক বুজতে পারতেছি না l ২০০০ সাল কি ???
Mubin Rehman গল্প টা মনে দাগ কেটে গেলো।
উপকুল দেহলভি লেখাটির ভাবনা অনেক ভালো লাগলো; আপনাকে আমার ঘরে আমন্ত্রণ;
আহমেদ সাবের সমাজের অবহেলিতদের জন্য লেখকের দরদ ফুটে উঠেছে গল্পটায়। বর্ণনায় একটু কাঁচা হাতের ছাপ আছে। তবে লিখতে লিখতে তা কেটে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
মোহাম্মদ নাজিরুল ইসলাম সূর্য আপনার কথা শুনে ভাল লাগলো..........
সূর্য গল্পের চরিত্রগুলো যথার্থ। ফটোকপি আমার এখানেও আছে তবে আমি গল্পের ফটোকপিওয়ালার মতো না ------ হা হা হা ছাত্র-ছাত্রীদের ৪০% কনেসেসন, টাকা না থাকলেও বাকিতে করে দেই, যদিও প্রায় সময়ই বাকিটা উদ্ধার হয়না। গল্পের ঘটনাটা হৃদয় ছুয়ে যাওয়ার মতো। বর্ণনা আরো সুন্দর এবং হৃদয়গ্রাহী হওয়ার দরকার ছিল, তবে খুব একটা খারাপও হয়নি......................... অনেক এগিয়ে যাওয়ার দোয়া থাকলো
sakil গল্পের থিম ভালো হলেও বর্ণনায় আরো মনোযোগী হলে ভালো করতে পারতেন . তারপর ও বলব আপনি লিখেছেন ভালো হয়েছে . শুভকামনা রইলো .
মিজানুর রহমান রানা তার কাছে একটি টাকা নেই। মাত্র একটি টাকা! এত অপমানেরই কথা। ঐ ভদ্রলোক দোকানদারের সহকারী কত সহজ ভাবে বলে ফেলল না ১৩ টাকার কম হবে না। ছেলেটির কত সুন্দর সহজ আর সাবলীল ভাষায় ছোট্ট একটি আবদার ভাইজান ১২ টাকায় দেয়া যায় না। ঐ সহকারী ছেলেটি কর্কশ আর রাবিশ ভাষায় না শুধু ভয়ংকর চোখ রাঙ্গানো সহকারে কোমল মনা ঐ ড্যাবা ড্যাবা চোখের ছেলেটিকে বলে দিল কম নাই।-----আমাদের সমাজচিত্রেরই একটা অংশ আপনি তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ।

২৫ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪